বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ জাকির লস্কর-মুন্সীগঞ্জঃ-
মুন্সীগঞ্জ টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের শুক্রবারের চেয়ারম্যান হাজী দুলাল। তিনি বালিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এই জনপ্রতিনিধি মাসের ৩০ দিনের মধ্যে প্রায় ২৬দিনই ব্যবসা বানিজ্যের কাজে থাকেন ঢাকায়।
নিজের ব্যবসা বানিজ্যে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। এদিকে নানান ভোগান্তিতে বালিগাঁও ইউনিয়নের জনগন। তাই, এলাকার লোকজন তাকে শুক্রবারের চেয়ারম্যান হিসেবেই জানেন।
প্রতি শুক্রবার তিনি পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে এলাকায় আসেন দাওয়াত খেতে। আর সরকারি এবং পরিষদের কোনো কাজ লাগলে তার স্বাক্ষর আনতে যেতে হয় ঢাকাতে। একই কায়দায় এলাকার লোকজনের জন্ম-মৃত্যু এবং ওয়ারিশ সনদ, সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্সসহ যেকোনো কাজে যেতে হয় ঢাকায় অথবা ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ ইসমাহিল হোসেনের কাছে গিয়ে হাজার টাকার নোট দিলেই মিলে যায় চেয়ারম্যান হাজী মোঃ দুলাল এর স্বাক্ষরীত ছীল।
টাকা না পেলে ঘুরিয়ে পেচিয়ে সেবা নিতে আসা লোকজনকে বলা হয় চেয়ারম্যান গ্রামে আসবে শুক্রবার, সে সময় দেখা কইরেন। গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে বালিগাঁও ইউপিতে। এদিকে চেয়ারম্যান থাকেন ঢাকায়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে ওই পরিষদে গিয়ে দেখা যায় চেয়ারম্যানের রুমের দরজায় তালা ঝুলছে।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ এ পুনরায় নৌকা মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ২৪ ঘন্টা গ্রামে থাকলেও ইউপিতে বসছেন কতটুকু সময় তা নিয়েও প্রশ্ন জমে আছে জনমনে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি নিজ নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণকে নিরলসভাবে সেবা প্রদান করবেন। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ এবং দুর্ভোগে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ দুর্গত জনসাধারণের পাশে থাকবেন।
কিন্তু মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও ইউপি থেকে আওয়ামীলীগ সমোর্থীত নৌকা প্রতীকে বেশ কয়েক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাজী মোঃ দুলাল এর ক্ষেত্রে চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। এ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে কখনো নিজ কার্যালয়ে বসেননি ঠিকমত। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, বর্তমানেও রানিং চেয়ারম্যান তথা আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ এ তিনি পুনরায় আওয়ামীলীগ সমোর্থীত নৌকা প্রতিক পেয়েছেন।
আসছে ২৮ নভেম্বর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাই তিনি নির্বাচনী প্রচারণার কাজে গ্রামে আসলেও বসছেন না ইউপি কার্যালয়ে। তার ব্যবসা বানিজ্যে সব ঢাকাতে। সেই সুবাদে তিনি থাকেন ঢাকায়। বিগত বছরগুলোতে শুক্রবার ব্যাতিত প্রয়োজনে ঠিকমত তাকে কাছে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের মহামারি যখন বাংলাদেশেও সংক্রমন শুরু। জনগনের জানমালের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে লকডাউন দেয়া হয়। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে উপজেলার অন্যান্য ইউপির জনপ্রতিনিধিরা জনসাধারণের পাশে থেকে সেবা প্রদান করলেও শুক্রবারেও হাজী মোঃ দুলালকে এলাকায় দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, চেয়ারম্যান হাজী মোঃ দুলাল প্রতি শুক্রবার এলাকায় আসেন দাওয়াত খেতে। এদিন শালিস দরবার কিংবা নিজ প্রয়োজনে নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এলাকার মানুষ তাকে শুক্রবারের দাওয়াতি ও শালিসি চেয়ারম্যান হিসেবে চিনেন। আর মাঝখানে যেকোনো প্রয়োজনে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হয় ঢাকায়। বড় বড় নেতাদের প্রয়োজনে তিনি গ্রামে মাঝে মধ্যে আসলেও কাজ সেরে সন্ধ্যার আগেও গ্রাম ছাড়েন ঢাকার উদ্দেশ্যে।
এছাড়া এ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের অনেক মূল্য। কার্যালয়ে কর্মকর্তারা জরুরি প্রয়োজনে স্বাক্ষর আনতে ঢাকায় যেতে হয়। এ চেয়ারম্যান কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোঃ ইসমাহিল এর বিরুদ্ধে রয়েছে সেবা প্রত্যাশীদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ।
এদিকে চেয়ারম্যান ঢাকায় ব্যবসার কাজে থাকায় এই সুযোগে ইউপি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইসমাহিল ঘুষ বানিজ্যের আখড়া বানিয়েছেন ইউপি পরিষদটিকে এমনটাই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে।
Leave a Reply