বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ অপরাহ্ন
শ্রীনগর(মুন্সীগঞ্জ)প্রতিনিধি:
মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হয়রানির শেষ নেই। সকলের সামনেই প্রকাশ্যে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। ষোলঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদার মাহমুদ শাহীনের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মে ছয়লাব করে ফেলেছেন তার অফিস। এই দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর কর্মকর্তার খপ্পরে পড়ে সেবা নিতে আসা জনসাধারণের ভোগান্তি এখন চরমে পৌছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং সঠিক তদারকি না করার ফলে বছরের পর বছর দিদার মাহমুদ শাহীন এমন কাজ করেও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এইসব ভুক্তভোগী জনসাধারণের প্রশ্ন এই হয়রানীর শেষ কোথায়? সেবা নিতে এসে ভূক্তভোগীরা দিদার মাহমুদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজী নন।
সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসের সামনে গিয়ে সাংবাদিকগণ দেখেন দুই কর্মচারী কর্মব্যস্ত। কিন্তু ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অফিসে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ১০.৪০ মিনিটে তার দেখা মিলল অফিসে। ৫-৬জনকে পাশের টেবিলে পাঠিয়ে দিয়ে ঢাকার জমি জমা বিক্রিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মধ্য বয়সী মহিলার সাথে। ঢাকা মিরপুর ১৩ নং জমি কেনা বেচার মাঝে মধ্য বয়সী মহিলার সাথে বলেন, জমি ক্রয় করার সময় আমাকে পারলে শেয়ারে নিয়ে নিয়েন। ১১.২০ মিনিটে জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০০০ হাজার টাকা ঘুষ নিলেন। ঘুষদাতা রশিদ চাইলে কর্মকর্তার সামনেই অপর কর্মচারী বলেন, ঘুষের টাকার আবার রশিদ হয় নাকি। এর মাঝেও বিভিন্ন দেনদনবার হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি অফিসে কাজ করেন। সেবা নিতে আসা নারী পুরুষ, বৃদ্ধ সকলের সাথে সে খারাপ আচরণ করেন। মানুষকে খেপিয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন।
বিটিভির সাবেক এক কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল সেবা নিতে যান ষোলঘর ভূমি অফিসে। তার সাথেও সে বাজে ব্যবহার করেন এবং অন্য খতিয়ান নাম্বারে খাজনার চেক কেটে ৩৯০টাকা রেখে দেয়। ইব্রাহীম খলিল বলেন, অফিসার ঘুষের জন্য চাপাচাপি করলে, তিনি বলেন আমি ঘুষ খাইনি আর আপনাকে ঘুষ দেবোওনা। এই কথার পরে সে ভুল খতিয়ান নাম্বারে খাজনার চেক কাটেন। দিদার মাহমুদ শাহীনের মতো ঘুষখোর বাংলাদেশে আছে কিনা আমার জানা নেই।
জানা যায়, দিদার মাহমুদ শাহীনের এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, জমির মাঠ পর্চা নিতে এই ভূমি অফিসে ২শ থেকে ৫শ’ টাকা দিতে হয়। আর কর্মকর্তার সবচেয়ে বড় দুর্নীতির জায়গা হল জমির মিউটিশন করা ও খাজনা কাটানো। জমি ক্রয় করার পরে প্রত্যেক জমির মালিককেই বাধ্যতামূলক জমির রেকর্ড (মিউটিশন) করতে হয়। সরকারি ধার্য্য অনুযায়ী মিউটিশন ফি ১১৭৫ টাকা। কিন্তু কর্মকর্তা দিদার মাহমুদ শাহীন জমির মালিকদেরকে বিভিন্নভাবে এটাওটা বুঝিয়ে হয়রানী করে ১০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকার চুক্তি করেন জমির মিউটিশনের জন্য। ১০ টাকা খাজনার জন্য গুনতে হয় ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টকা। তখন জমির মালিকগণ নিরুপায় হয়ে কর্মকর্তার ফাঁদে পা দিয়ে হাজার হাজার টাকা গচ্ছা দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, ৯ মাস আগে আমি জমির খাজনা দিতে ষোলঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে ভূমি কর্মকর্তা আমাকে ৩০ টাকা একটি খাজনার চেক কেটে দিয়ে ২হাজার টাকা নেয়।
পরে তার মালিকানাধিন জমি মিউটিশন করার জন্য ভূমি অফিসে গেলে তহশিলদার দিদার মাহমুদ শাহীনের সাথে সাক্ষাৎ হলে সে তাকে বিভিন্ন কাগজপত্রের কথা বলেন। তবে এক পর্যায়ে তার সাথে আমার ২২ হাজার টাকার চুক্তি হয়। চুক্তির প্রেক্ষিতে মিউটিশন সব টাকা পরিশোধ কার হয়। মিউটেশন শেষে জমির খাজনা দিতে গেলে সে আমার কাছে ১৮হাজার টাকা চায়। পড়ে এলাকার গণ্যমাণ্য কয়েক জনের সুপারিশে খাজনার চেকটি ১৭০০ টাকা দিয়ে কেটে আনেছি, কিন্তু সেখানেও খাজনার চেক দেয়া হয়েছে ১১০০ টাকার।
অপর এক ভূক্তভোগী বলেন, আমি ভূমি অফিসে আমাদের জমির খাজনা দিতে গেলে কর্মকর্তা আমাকে বিভিন্ন তালবাহানা করে পরে বলে ৫হাজার টাকা দিলে খাজনা চেক দিব। আমি খাজনার চেক না কেটে চলে এসে আমার বোনকে পাঠাই। সে ভূমি অফিসে গেলে কর্মকর্তা তার কাছে বলে দেয় ১০ হাজার টাকা লাগবে। পড়ে আমি গেলে আমাকে বলে এখন ২৫ হাজার টাকা লাগবে খাজনা দিতে। আমি উপায় না পেয়ে একজনকে ধরে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে খাজনাটি কাটিয়েছি। এইভাবে শত শত মানুষ অসাধু ঘুষখোর কর্মকর্তা দিদার মাহমুদ শাহীনের খপ্পড়ে পড়ে হয়রানী এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রোববার সকাল ১১টার সময় অপর এক ব্যক্তি ৫০০০ হাজার টাকা চুক্তি করে খাজনা পরিশোধ করে জমি রেজিষ্ট্রি করবে। একাধিক দাগ নং হওয়াতে অফিস সহকারীর কাছে তাকে পাঠানো হয়। অফিস সহকারি একাধিক দাগ নং দেখে খাজনা রশিদ না কেটে কর্মকর্তা দিদার মাহমুদের কাছে পাঠায়। দিদার মাহমুদ জমি ক্রয় বিক্রয়ের ব্যস্ততার কারণে ছেলেদের সাথে রাগ করে বলেন তোমাদের কাছ করা হবে না। পরক্ষনেই ছেলেটার বিরক্তিকর আচরনের কারণে তিনি বলেন, এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকো পরে করবো।
এ বিষয়ে ষোলঘর ইউনিয়ন ভূমি (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা দিদার মাহমুদ শাহীন বলেন, রাতে দরজা বন্ধ করে রাত ১০পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অফিসের বাগান থেকে কাঠাল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি বলেন, রাত দিনের বেশিরভাগ সময়ই পিছনের পরিত্যাক্ত ভবনে নেশাখোরদের অভয়ারণ্য। তবে তার সেলফোনে ০১৮৫৭৮৭৬৫৪০ নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজীব আহমেদ বলেন, ষোলঘর ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে লিখত অভিযোগ দিলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এখন তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাইনি আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি কাউকে দিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করান তারপর দেখেন তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
Leave a Reply