বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ অপরাহ্ন
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানবিক ও মানবতা চরম পর্যায় পৌছে গেছে। মুন্সীগঞ্জে বিনা অপরাধে মাদক ব্যবসা না করেও মাদক মামলায় একজন মানুষিক বিকারগ্রস্থ পাগলনী স্বামী হারা জাহানারা বেগম এখন জেলে। ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টের দ্বিতীয় তলার গারোদের সামনে দেখা যায় একটি বেঞ্চে পাগলনী জাহানারা বেগম বসে আছেন। তখনই খোজ নিয়ে জানা যায় পাগলনী মাদক মামলার (৬৫/৩/২২) ওয়ারেন্টের আসামী। বিনা অপরাধে পাগলনীর বিরুদ্ধে ৩৬/১ ২৪ এর ক ধারায় মামলা করা হয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বন্ধু বন্ধবদের খাওয়ানোর জন্য হৃদয় বিয়ার আনে। সেই বিয়ার হৃদয়, সেলিম, মামাতো ভাই রাজিব পাগলনীর ঘরে রেখে যায়।
পাগলনীর বাড়িতে শনিবার (২৭ আগস্ট) গেলে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ণ একটি বাড়িতে বসবাস করে জাহানারা বেগম। তার দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে। ১১ মাস পূর্বে স্বামী জাব্বার শেখকে হারিয়েছেন জাহানারা। পাগল ছেলেটি দিপু মিলে কাজ করে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। বর্তমানে দিপু অনেক অসুস্থ তাই কাজে যেতে পারেন না। বড় মেয়ে বিবাহ দিয়েছেন স্বামী বিদেশে আছেন কিন্তু মেয়ের ভরণ পোষন বা খোজ খবর তেমন নেন না বলে জানা গেছে। অপর মেয়েও মানুষিক রোগী। স্বামী আব্দুল জাব্বার শেখও মারা গেছেন কয়েক মাস পূর্বে। স্বামীহারা তিন সন্তানের জননী পাগলনী জাহানারা বেগমকে মাদক মামলার ওয়ারেন্টের আসামী হয়ে এখন জেলে আছেন।
এই অসহায় পরিবারটিকে জিম্মি করে রেখেছে হৃদয় ও তার মা সুফিয়া বেগম। কোন কিছুই বলতে দিচ্ছে না। হুমকি ধামকি দিয়েই চলছেন হৃদয়ের মা সুফিয়া বেগম। পাগলনী জাহানারা বেগমের পাগলী মেয়েদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যাতে মাদক বিয়ায়ের চালানের মালিকদের নাম প্রকাশ করে না দেয়।
জানা যায়, হৃদয় (২৮) পিতা ইলিয়াস শেখ, মাতা সুফিয়া বেগম। হৃদয় ৭মাস পূর্বে বিবাহ করে। সেই বিয়ের গায়ে হলুদের দিন হৃদয় ও চুড়াইনের সেলিম আরো অজ্ঞাত দুইজন ফেনসিডিল রেখে যায় পাগলনী জাহানারা বেগমের ঘরে। যেহেতু দুই মেয়ে ও ছেলে পাগলনীর স্বামী নেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হৃদয়, তার মা সুফিয়া, হৃদয়ের মামাতো ভাই রাজীব (২৬) পিতা আমিন হক আদারিয়াতলা এবং চুড়াইনের সেলিম। হৃদয়, সেলিমসহ ৪জনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে পুলিশের সাথে বোঝাপরা করে। মামলা থেকে মাদক ব্যবসায়ী হৃদয়, সেলিম ও হৃদয়ের মামাতো ভাইয়ের নাম বাদ দিয়ে পাগলনী জাহানারা বেগমের নাম দিয়ে কয়েক পিস বিয়ার দিয়ে মামলা দেয়। হৃদয় ও তার মা সুফিয়া বেগম জাহানারাদের জানিয়েছে তার ছেলে হৃদয় পুলিশের সাথে সব টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে মামলা বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু সাত মাস পরে এই মামলায় পাগলনী জাহানরার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট বের হয়। সেই ওয়ারেন্ট তামিল করার জন্যই এসআই ইলিয়াস ২৫ আগস্ট ধরে কোর্টে চালান করে দেয়। পুলিশের সোর্স হিসেবে লেনদেনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে সাহাবুদ্দিন।
১১৫ বছরের বৃদ্ধ রমিজ উদ্দিন জানান, জাহানারা ও তা পরিবারের সকল সদস্যই মানুষিক রোগী। জাহানারাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সাইকো চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন। এই জাহানারা কিভাবে মাদক ব্যবসায়ী হয় এটা স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশ কিভাবে এমন একটি নি:স্ব পরিবারের বিরুদ্ধে নিরপরাধ পাগলীর বিরুদ্ধে মামলা দেয় এবং ধরে নিয়ে যায়!
জাহানারার ভাই শিপন জানান, আমার বোনকে সাইকে ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে। আমার বোনের ঘরে হৃদয়ের গায়ে হলুদের দিন হৃদয়, সেলিম ও তার আত্মীয় স্বজন মাদক রেখেছে। আমার বোন এই মাদকের সাথে জড়িত না। হৃদয় পুলিশের সাথে বোঝা পরা করে টাকার বিনিময় সকলের নাম বাদ দিলেও আমার বোনকে ফাসিয়ে দিয়েছে। এই বেআইনী কাজের বিচার চাই প্রশাসনের কাছে।
বিয়ারের মালিক হৃদয় সাংবাদিকদের জানান, ৪ পিস বিয়ার পাইছে সেই খবরের জন্য কি এলাকায় আসতে হয়। এটার জামেলা তো শেষ করে দিয়েছে। কোন সমস্যা নেই।
এসআই ইলিয়াস জানান, ঘটনার দিন জাহানারার ঘরেই এক কেস বিয়ার পাওয়া যায়। আমি ঘরের ভিতরে যাইনি। এসআই সুকান্ত বাউল গিয়েছে। ঘটনার দিন জাহানারা অসুস্থ ছিল তাই তাকে আটক করা হয়নি।
Leave a Reply