বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন
শরিফুল খান প্লাবন
প্রণয়নকারী গণ চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর এ গণ্ডি, এ দেয়াল , এ সীমানা প্রাচীর অবরুদ্ধ করে রেখেছে বাংলাদেশের লক্ষ-কোটি ছাত্র সমাজকে। তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুব সমাজ যখন উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত, দিশেহারা।
কর্মসংস্থানের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এই বয়সসীমা নিয়ে তরুণ-তরুণীরা অখুশি। সরকারি চাকরি এ দেশে মর্যাদার, গর্বের।সরকারি চাকরি এ দেশে লোভনীয়। সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিন্ত একটা জীবন পার করে দেওয়া।সরকারি চাকরির কোনো খারাপ দিক নেই।সরকারি চাকরির আগাগোড়া সব ভালো। চাকরিপ্রার্থীদের একটি জনপ্রিয় দাবি হচ্ছে, সরকারি চাকরির জন্য সবার বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পঁয়ত্রিশ করা হোক। এ নিয়ে গত ১০ বছর ধরে আন্দোলন চলছে। ৩০ ঊর্ধ্বরা সার্টিফিকেট ছিঁড়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। বিভিন্ন সময়ে মাঠে থেকেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি, আশ্বাস ও পুলিশি বাধাসহ নানা কারণে এসব আন্দোলন ভেস্তে গেছে। জাতীয় সংসদে এখন পর্যন্ত ৭১ বার সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি উত্থাপন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তবে করোনার কারণে চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতি এড়াতে বয়সে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এখন দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩০ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৩২ বছর। আমি মনে করি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রসঙ্গ আসছে প্রধানত সেশনজটের কারণে। একজন শিক্ষার্থী যদি ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারতেন, তাহলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বেঠিক ছিল না। কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষ করতে আরও দুই–তিন বছর বেশি লাগছে। এর মধ্যে আবার রকমফের আছে। সম্ভবত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি ত্যাগ স্বীকার করছেন।
তাঁদের মধ্যে কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যন্ত্রণাটা আরেকটু তীব্র। তাঁরা গড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কলেজের তুলনায় ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে পড়ছেন। ১৬ বছর ২ মাসে এসএসসি, ১৮ বছর ৪ মাসে এইচএসসি ও ১৮ বছর ১০ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলে ১৯ বছর বয়সে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করলে ২৪-২৫ বছরের পূর্বে কখনো অনার্স শেষ করা সম্ভব নয়।
২৬-২৭ বছরের আগে মাস্টার্স শেষ করা সম্ভব নয়। যদি মাস্টার্স শেষ করে বিদেশে পড়তে যান, তবে দেশে এসে বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আর সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেশন জট মুক্ত নয়। ছাত্র ও শিক্ষক অনুপাতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ৮৭% শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যয়নরত। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, সেই সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়টিও সেশন জট মুক্ত নয়। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শিথিল থাকা উচিত। কেউ যদি ৪০ বছর বয়সে সব ধরনের পরীক্ষায় উতরে সরকারি চাকরিতে আসতে চান, তাঁর যদি সব ধরনের যোগ্যতা থাকে, তাহলে তাঁর অধিকার হরণ কেন? এসব কারণ বিবেচনা করে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবীটা যথেষ্ঠ যৌক্তিক।
Leave a Reply