মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ মোঃ আখলাকুর রহমান আশিক
সোমেশ্বরী নদী থেকে বালি উত্তোলনের মাধ্যমে ধিরে ধিরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।মানা হচ্ছে না নিয়মকানুন,
প্রশাসনের অবহেলার কারনে দেখার কেও নেই। স্থানীয় ও পরিবেশবিদরা বলছেন, অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে
বালু ও পাথর অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলনের ফলে একবারে স্ফটিক-স্বচ্ছ নদীটির মৃত্যুর কাছাকাছি।
আমরা সবাই জানি দেশে আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে বড় দালানকোঠা, পাকা রাস্তাসহ বহুবিৎ কাজ বালু ছাড়া অচল। প্রতি
বছর মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করা হয় বালু উত্তোলনের মাধ্যমে,অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়,ফলে
বেকারত্ব দেশ থেকে কমছে। কিন্তু এর খারাপ দিকগুলো দিকেও আমাদের সবার নজর দেয়া উচিত।
সোমেশ্বরী নদী ভারতের মেঘালয় থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় নদীর সাথে মিশে গেছে।এটা আমাদের দেশের অন্যতম
বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ নদী।বছরের অর্ধেক সময় নদী পুরপরি শুকনো থাকে বাকি সময় পানিপূর্ণ। উভয় সময়েই এই নদী
থেকে বিপুল পরিমানে বালু উত্তোলন করা হয়। সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তলন প্রায় ২০ বছর যাবত চলছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলনের জন্য নদীর সাতটি স্পট ইজারা দিয়েছে। ইজারা দেওয়া নির্ধারিত বালির
কোয়ারারি হল বিজয়পুর-ভবানীপুর (২৮৭ একর); টেরিবাজার-শিবগঞ্জ বাজার (৯৭৬ একর); টেরিবাজার-চৈততি (২৮৭
একর); বিরিসিরি-কেরনখোলা (৩৪১ একর); গাওকান্দিয়া (১৪২ একর); ঝঞ্জাইল-শঙ্করপুর (১৪০ একর); ওমরগাঁও-
হাশানোয়াগাঁ-বিশুতি (৩৫ একর)। প্রশাসন বালু উত্তোলনের জন্য কিছু শর্ত আরোপ করে – এই বালি কেবল সকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তোলন করা যায় এবং মোটর চালিত পাম্প বা ড্রেজার প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যাবে না। তবে
ইজারাদাররা চারিদিকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে; কখনও কখনও, ২০০ টি ড্রেজার দিয়ে নদীতে বালু উত্তোলন করতে
দেখা যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়রা।
দুর্গাপুর শহরের বিশিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা জনাব কেফায়েত উল্লাহ্ জানান, বালু উত্তোলনের ১ নং ঘাট থেকে প্রতি দিন
২০০০ ট্রাক এর বেশী বালু উত্তোলন করা হয়। এরকম অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে
নদীর দুই পার ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।নদীর পাড়ের গ্রামগুলোর মাটির উচ্চতা কয়েক হাত নেমে যাবে,যার ফলে
বন্যা,ফসল নষ্ট, গ্রামবাসীর দৈনন্দিন জিবনে ব্যাঘাত,বিসুদ্ধ পানির অভাব সহ অনেক প্রকারের সমস্যার সৃষ্টি হবে।
বর্ষাকালে ড্রেজারগুলি বালু উত্তোলনের জন্য নদীর তীরের নিকটে নিয়ে আসা হয়, যার ফলে সংলগ্ন অঞ্চলগুলি ভাঙনের
হুমকিস্বরূপ হয়ে দারিয়েছে। তিনি আরো জানান,বালু উত্তোলনের কারনে গ্রামবাসি এখনই অনেক প্রকার সমস্যার
সম্মুখীন হচ্ছে। নদীর দুই পারের কোন গ্রামেই নল্কুপে পানি উঠে না,পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে গেছে , গ্রামবাসী
বছরের অর্ধেক সময় সাবমারসিবল পাম্প ব্যাবহার করে,আর বর্ষাকালে নলকূপ এ পানি পায়।
এই অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বালু উত্তোলন অবসানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি ২০১৫ সালে একটি
হাইকোর্ট বেঞ্চে একটি রিট আবেদন করে।জবাবে, হাইকোর্ট ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সরকারকে একটি রুল জারি করে
জিজ্ঞাসা করেছিল যে নদীতে বালুমহালদের ইজারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। কেন সোমেশ্বরীকে পরিবেশগত দিক
থেকে সমালোচিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হবে না।এছাড়াও, ইজারা-বহির্ভূত অঞ্চলে বালু উত্তোলন
নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে নদী ও এর বাস্তুতন্ত্রের কোনও
ক্ষতি না ঘটে।এই নদীতে বালু উত্তোলনের প্রভাব নির্ধারণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছিল এইচসি।
কিন্তু আদালতের নির্দেশনা এখনও কার্যকর হয়নি। অগভীর মেশিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন নদীর জন্য
মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয় ও পরিবেশ আইনজীবি সমিতি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। "কয়েকশ
অগভীর মেশিন অবিচ্ছিন্নভাবে চালিত হচ্ছে। এদিকে স্পষ্ট প্রমাণ হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর হয়নি," পরিবেশ
আইনজীবি সমিতি চিফ এক্সিকিউটিভ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায়, সোমেশ্বরী নদী আমাদের দেশ, জাতি ও ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের সম্পদ আমাদের নিজেদেরই আগলে
রাখতে হবে,এর সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।যেহেতু নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব না,তাই সংশ্লিষ্ট
প্রসাশনের কাছে আবেদন রইল,ইজারাদারা যেনো নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন করে এবং অসাধু লোক যারা নিয়ম বহির্ভূত
বালু উত্তোলন করে সোমেশ্বরী নদীর ক্ষতি করছে,তাদের আইনের আওতায় আনা হোক
Leave a Reply