বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাতামুহুরী নদী ও লামা-পোপা-বমু খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে লামা বাজারের আশপাশের এলাকা সহ বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। ধীরে ধীরে বাড়ছে পানি, তার সাথে মানুষের মনে বাড়ছে আতংক।
এদিকে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের শতাধিক স্থানে পাহাড় ধসে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সাথে উপজেলা সদরের সাথে আলীকদম উপজেলা এবং রূপসীপাড়া, লামা সদর ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে লামা উপজেলা প্রশাসন।
পানিতে সড়কের ৬টি স্থানে তলিয়ে যাওয়ায় লামা ও আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারী বর্ষণে লামা উপজেলার এই পর্যন্ত শতাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণস্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে কিছুক্ষণ পরপর মাইকিং এর পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করছে লামা উপজেলা প্রশাসন ও লামা পৌরসভা।
লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি খালে ভাঙ্গন ও দৃশ্য মান,
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লামা পৌরসভার বাজার এলাকা, নয়া পাড়া, ছোট নুনারবিল, বড় নুনারবিল, চেয়ারম্যান পাড়া, কলিঙ্গাবিল, রাজবাড়ি, চোররবিল, মধুঝিরি, লাইনঝিরি, শিলেরতুয়া, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লা পাড়া, পুকুরিয়া খোলা ও দরদরী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত থাকায় বন্যার পানি বেড়ে অবস্থার অবনতি হতে পারে বলে জানান লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম।
রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা বলেন, টানা বর্ষণে ইউনিয়নের পুকুরিয়া খোলা ও দরদরী বড়ুয়া পাড়া এলাকা সহ ৩০টির অধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পুকুরিয়া খোলা গ্রামে পাহাড় ধসে মোঃ শাহারাজ বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সে পুকুরিয়া খোলার আব্দুল মোতালেব এর ছেলে। একই সময় ইউনিয়নের লামা রূপসীপাড়া সড়কের দরদরী বড়ুয়া পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে রাস্তার উপরে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রফিক বলেন, বুধবার রাত ২টায় লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড নারকাটা ঝিরি মসজিদের পাশে মৃত জমির আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন ও আবুল কালামের বসতবাড়ির উপর পাহাড় ধসে পড়েছে। এছাড়া এই ওয়ার্ডের ২৫টির অধিক বাড়ি পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত।লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রন্ত আবুল কালামের বসতবাড়ি।
লামা পৌরসভার লাইনঝিরি মোড়ে রাস্তার পাশের একটি বড় রেইনট্রি গাছ উপড়ে পড়ে ৩৩ হাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে যায় ও ২টি বিদ্যুতের খুঁটি হেলে যায়। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহে কাজ করছে বিদ্যুৎ কর্মীরা। গাছটি কেটে সড়ক যোগাযোগ সচল করেছে লামা ফায়ার সার্ভিস।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বগাইছড়ি ব্রিজটির গাইডওয়াল ভেঙ্গে ব্রিজের ফাটল ধরেছে। এখনি মেরামতের উদ্যোগ না নিলে ব্রিজটি ভেঙ্গে যেতে পারে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি লামার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। অতিবৃষ্টিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সোমবার বিকেলে জরুরী সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত দুইদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান জানান, দ্রুত দুর্যোগ কমিটির সভা করে দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী ও সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, পাহাড় ধস ও বন্যার যে কোন সংবাদ পেলেই আমরা উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ছুটে যাচ্ছি। জরুরী ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
Leave a Reply