মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন
মোঃ রমজান হোসেন আনাজ
আজ ১৯ আগষ্ট বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ৮৬ তম জন্মদিন।১৯৩৫ সালের ১৯ আগষ্ট ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুরইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলায় তিনি মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ নামেই গ্রামে পরিচিত ছিলেন।তাঁর পুরো নাম আবু আব্দুর মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ।ডাক নাম জাফর।১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের পর তিনি তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে কলকাতা থেকে নিজ জন্মভূমি ফেনীতে চলে আসেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক
(সম্মান)ডিগ্রি অর্জন করেন।জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি ১৯৫০ সালে “যুগের আলোতে” যোগ দেয়ার পর সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।পরে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক ও সিনেমা নামে সংবাদপত্রে কাজ করেন।“সূর্যগ্রহণ” নামে তাঁর প্রথম গল্পের সংকলন ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়।তিনি ১৯৫৭ সালে “জাগো হুয়া সাবেরা” চলচ্চিত্রে সহকারি হিসাবে কাজ করেন।১৯৬০ সালে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র “কখনো আসেনি” দিয়ে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন সিনেমা “সঙ্গম” তৈরি করেন।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।ভাষা আন্দোলনের প্রভাব তাঁর উপর এতো বেশি ছিলো যে তিনি তাঁর কিংবদন্তী চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেয়া” তৈরি করেছিলেন।১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন এবং সেই সময় তিনি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তিনি কলকাতা গিয়েছিলেন এবং সেখানে তাঁর “জীবন থেকে নেয়া” ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিলো।তাঁর ছবিটি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিলো।যদিও সে সময় তাঁর আর্থিক সমস্যা চলছিলো।তিনি তাঁর শো থেকে প্রাপ্ত সমস্ত অর্থ মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টকে দিয়েছিলেন।তিনি ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবী ও ১৯৬৮ সালে সুচন্দাকে বিয়ে করেন।তাঁরা দুজনেই চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ছিলেন।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২ দিন পূর্বে তাঁর অগ্রজ কথাশিল্পী শহীদুল্লাহ কায়সার ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হোন।জহির রায়হান তাঁর ছোট্ট কর্মজীবনে নানাবিধ সম্মানে সম্মানীত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মিত তাঁর প্রামাণ্যচিত্র “স্টপ জেনোসাইড” (১৯৭১) এর জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন।তিনি ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর “একুশে পদক” এবং ১৯৯২ সালে “স্বাধীনতা পদক” সহ নানা পদকে ভূষিত হোন।
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ এই সূর্য সন্তানকে হারিয়ে এক অপূরণীয় ক্ষতিতে নিমজ্জিত হয়েছিলেন।আজও আমরা এই বাংলার সূর্য সন্তানের অভাব বোধ করে চলেছি।
আজ বাংলাদেশের এই সূর্য সন্তানের ৮৬ তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর রুহের শান্তি কামনা করছি।
Leave a Reply