বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ অপরাহ্ন
রিপোর্টারঃ মামুন সিরাজ
সরকারী ব্যায়ামাগারের বেহাল দশা রাজধানী ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা ব্যায়ামাগারগুলো এখন বেহাল। এসব ব্যায়ামাগারে পুরনো আর মরিচা ধরা সরঞ্জাম দিয়েই চলছে শরীরচর্চার কার্যক্রম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা ২১ ব্যায়ামাগারের মধ্যে অন্তত ১০টি ব্যায়ামাগার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব ব্যায়ামাগারে নেই প্রশিক্ষক, নেই আধুনিক শরীরচর্চার সরঞ্জামসহ শরীরচর্চা করার মতো উপযোগী পরিবেশ। কোনো কোনো শরীরচর্চা কেন্দ্রের দেয়ালের কিছু কিছু জায়গায় আস্তর উঠে গেছে। ব্যায়ামের সরঞ্জাম দেখলেই বোঝা যায়, অনেক পুরনো।
তবে কিছু কিছু সরঞ্জামে মরিচাও ধরেছে। আবার এর মধ্যে অনেকটাই নষ্ট। ফলে কয়েকটি ব্যায়ামাগার বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো চলছে ধুঁকে ধুঁকে। সেগুনবাগিচার একটি ব্যায়ামাগার বন্ধ আছে প্রশিক্ষক আর যন্ত্রপাতি না থাকায়।
ধুপখোলা এলাকায়ও ছিল একটি ব্যায়ামাগার। নতুন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের সময় ভেঙে ফেলা হয় তা। এরপর আর চালু করা হয়নি। পুরান ঢাকার নারিন্দায় ফকির চান কমিউনিটি সেন্টারে ‘হাবিবুল্লাহ সরদার’ ব্যায়ামাগারটি ২০০৮ সালে গড়েছিল ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।
এখন এর ৭০ শতাংশ যন্ত্রপাতিই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তবে এখানে শিক্ষার্থী প্রায় তিন শতাধিক বলে জানালেন প্রশিক্ষক রহমত উল্লাহ ওরফে লাকি ওস্তাদ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২১টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ব্যায়ামাগার আছে দুটি। এগুলোর মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ছয়টি। আর এখন যেগুলো চালু আছে, সেগুলোর অবস্থাও করুণ। সূত্রাপুরের ব্যায়ামারগারটিতে নেই আধুনিক সরঞ্জাম, এ জন্য এখানে তেমন কেউ আসে না। সদরঘাটের নবযুগ ব্যায়ামারগাটিরও অবস্থা বেহাল।
অভিযোগ আছে, এখানকার ব্যায়ামাগারটি সময়মতো খোলা হয় না। কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত নাজিরা বাজার ব্যায়ামাগারটি রয়েছে একটি পুরনো ভবনে। যার দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।এখানকার সরঞ্জামগুলোতে ধরেছে মরিচা। এর পরও প্রশিক্ষক মাকসুদুর রহমান জানালেন, ‘সব ব্যায়ামাগারের মধ্যে আমাদের এখানেই তুলনামূলক বেশি শিক্ষার্থী প্র্যাকটিস করে।’
গুলিস্তানের কাছে কাপ্তান বাজারের ব্যায়ামাগারটিতে প্র্যাকটিসে আসে খুবই কম মানুষ। নেই তেমন সুযোগ-সুবিধাও। হাজী গণি সরদার কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থিত লালবাগ ব্যায়ামাগারটিরও একই অবস্থা। এ ছাড়া আজিমপুর বটতলা ব্যায়ামাগার, ইসলামবাগ ব্যায়ামাগার, বকশি বাজার, আজাদ মুসলিম ব্যায়ামাগার, শেরেবাংলা ব্যায়ামাগারসহ প্রায় সব ব্যায়ামাগারের অবস্থা নাজুক। সেখানে নেই ন্যূনতম শরীরচর্চার পরিবেশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি ব্যায়ামাগারে একজন করে প্রশিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছে ১০টিরও কম ব্যায়ামাগারে। বেশির ভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন শরীরচর্চা কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে মোট শরীরচর্চা কেন্দ্রের সংখ্যা ২০টি। এর মধ্যে অঞ্চল-৫ (সায়েদাবাদ) এ কেন্দ্রের সংখ্যা ৬টি হলেও মোঃ নুরুল ইসলাম খান একাই শরীরচর্চা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোট ৪টি কেন্দ্রে, অপরদিকে মোঃ রফিকুল ইসলাম আছেন ৩টি কেন্দ্রে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, আর্থিক সংগতি না থাকায় ব্যায়ামাগারগুলোর অবস্থা বেহাল। এসব ব্যায়ামাগার আধুনিকায়নের কোনো আশা নেই বলেও জানালেন তিনি। নারিন্দার শরত্গুপ্ত রোডের বাসিন্দা মতিউর রহমান জানান, প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি করতে হয়। মহল্লার শেষ প্রান্তে যে হাবিবুল্লাহ সরদার ব্যায়ামাগার আছে, তাতেও তেমন সুযোগ নেই। সেখানকার দুটি ফ্লোর মিলে ব্যায়ামাগার হলেও হাঁটার জন্য কোনো স্থান না থাকায় সেখানে যাওয়া হয় না। নাজিরা বাজার এলাকার বাসিন্দা আহমেদ আলী, যিনি নাজিরা বাজার ব্যায়ামাগারে তিন বছর ধরে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। তিনি বলেন, ‘সব অ্যানালগ যন্ত্র। আধুনিক কিছুই নেই। মাল্টি জিমটা (একসঙ্গে অনেক ধরনের ব্যায়াম করার যন্ত্র) নষ্ট। এর মধ্যেই ব্যায়াম করি।’ নাজিরা বাজার ব্যায়ামাগারে এসে জানা গেল, ভর্তি ফি ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি মাসে দিতে হয় ৩০ টাকা ফি। এখানকার তত্ত্বাবধায়ক বললেন, ‘প্রায় ৭০ শতাংশ সরঞ্জামই নষ্ট। নিজেরাই বিভিন্ন জিনিস জোড়া দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে ডিএসসিসির মেয়র এসেছিলেন এখানে। তখন তিনি সমস্যাগুলো তালিকাবদ্ধ করে নেন।’ আট বছর ধরে এই শরীরচর্চা কেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন মাকসুদুর রহমান। তিনি বললেন, ‘সর্বশেষ মেয়র হানিফ সাহেবের সময় কিছু কাজ হয়। এরপর জিম এমনই আছে। আমাদের জিমটা অনেক বড়, তবে মানুষ কম। শুধু ভালো সরঞ্জাম নেই বলেই লোক আসে না।’ নারিন্দার হাবিবুল্লাহ সরদার ব্যায়ামাগারে দেখা গেল কয়েকজনকে ব্যায়ামের নানা উপদেশ দিচ্ছেন লাকি ওস্তাদ। তিনি জানালেন, ‘এখানে এক বছরের জন্য ৭০০ টাকা নেওয়া হয়। এরপর কোনো টাকা নেওয়া হয় না। আমাদের এখানে শিক্ষার্থী বেশ ভালোই আছে। তবে আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পেলে আরো ভালো সুযোগ দেওয়া যেত। সদস্য সংখ্যাও বাড়ত।’ প্রশিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কেমন জানতে চাইলে লাকি ওস্তাদ (রহমত উল্লাহ) বলেন, ‘আমাদের তো ডেইলি বেসিকের চাকরি।
এর আগে আমরা বেশ কয়েকবার মেয়রের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা বলেছিলাম, তবে কাজ হয়নি। ফলে আমাদের চাকরি স্থায়ীও হচ্ছে না।
ব্যায়ামাগারগুলোর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির ৯টি ব্যায়াগারের দায়িত্বে থাকা তিন নম্বর জোনের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের যে ব্যায়ামাগারগুলো আছে, তাতে যুগোপযোগী যন্ত্র না থাকায় মেয়রের নির্দেশক্রমে এসব সমাধানের জন্য একটি ফাইল প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি পাস হলেই আমরা আধুনিক সেবা দিতে পারব।’
চার নম্বর জোনের অধীনে ছয়টি ব্যায়ামাগারের দায়িত্বে থাকা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘আমার অধীনে থাকা ব্যায়ামাগারগুলোর ব্যাপারে মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা খুব দ্রুতই আধুনিকায়ন করব।’ প্রশিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের অফিশিয়াল ব্যাপার। তাঁরা কিভাবে চাকরি নিয়েছেন, এটা বিবেচনা করে তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন।’
Leave a Reply