সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
শ্রীনগর(মুন্সীগঞ্জ)প্রতিনিধি:
শ্রীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রুসদী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পূণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনকে বাঁধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে একটি মহল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের রুসদী গ্রামে অবস্থিত ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহমান ও সহকারী মো. পারভেজ তদন্ত করতে আসেন। ক্লাস চলাকালীন সময়ে অভিযোগকারী আব্দুল কুদ্দুস ও শহিদুল ইসলাম মোল্লার নেতৃত্বে সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে হারুন অর রশিদ মোল্লা নামে এক ব্যক্তি জিপগাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-০২ ৩০১৭) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লেখা স্টিকার লাগিয়ে ও শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে হর্ন বাজাতে বাজাতে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এতে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি চিৎকার শুরু করে। ভয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষের দরজা জানালা গেইট বন্ধ করে দেয়। তার কিছুক্ষণ পরে শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেনকে বেশকিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে শ্লোগান দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল রহমানকে বলতে দেখা যায় যাদেরকে ডাকা হয়েছে তাদের সাথে কথা হবে। বাকী সবাইকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন সবাইকে নিয়ে বিদ্যালয়ের টিচারস্ কক্ষে অপেক্ষা করেন। লক্ষ্য করা যায়, শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত চলাকালীন সময়ে বহিরাগতরা বিদ্যালয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করলে শ্রীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।
আওয়ামীলীগ নেতা হারুন অর রশিদ মোল্লার কাছে শোডাউনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল বহর কে আনছে আমি জানিনা। আমি এসেছি বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে। নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যরা যদি চান তাহলে আমি সভাপতি হবো।
শ্রীনগর থানার এসআই প্রভাষ জানান, বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা এড়াতে অতিরিক্ত লোকজন সরতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (ঢাকা) বিদ্যালয় উপ পরির্দশক আব্দুর রহমান জানান, খুব শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এলাকাবাসী জানায়, গত জুলাই মাসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বানচালের জন্য অতি উৎসাহি মহলটি নানাভাবে ষড়যন্ত্র ও এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এখন মহলটি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে বিদ্যালয়ের পূণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে মিথ্যা ও অনিয়মের অভিযোগ এনে অভিযোগ করছেন। বিদ্যালয়ের লেখা পড়ার মান উন্নয়নে তাদের কোন খেয়াল নেই। অথচ সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন যাতে পুনরায় সভাপতি না হতে পারে সে লক্ষ্যে প্রভাব খাটাচ্ছেন।
এ সময় বিদ্যালয়টির দাতা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক শিক্ষক আব্দুল বারেক শেখ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আজকের শোডাউনে ছাত্র-ছাত্রীরা আতঙ্কিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তন্তর ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর এ ব্যাপারে বলেন, সভাপতি হওয়ার জন্য আজকে যারা উত্তেজনার সৃষ্টি করছেন। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাল চাননা। তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও অনিয়ম মিথ্যা অভিযোগ করে পুণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনে বাঁধা প্রদান করছেন। শোডাউনের ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই রুসদী উচ্চ বিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিজয়ী অভিভাবক সদস্য আব্দুল মঈম কমলের প্রস্তাবনায় ও সকল সদস্যর সম্মতিক্রমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে ৪ বারের সাবেক সভাপতি মো. আওলাদ হোসেনের নাম নির্বাচিত হয়। অথচ আব্দুল কুদ্দুস, শহিদুল ইসলাম মোল্লা, মিজানুর রহমান লন্ঠু, মো. মঞ্জুরুলসহ মহলটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।
Leave a Reply