বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ
খাগড়াছড়ি রামগড় উপজেলার জসিম উদ্দিন, পেশায় তিনি নৈশ প্রহরী। কর্মস্থল রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পদে নৈশ প্রহরী হলেও পুরো হাসপাতালে রয়েছে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। তার বিরুদ্ধে দায়িত্বের অবহেলা,সরকারি জমি ভোগদখল,অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার, হাসপাতালে পণ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারদের হুমকি, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত, কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি সহ নানা অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্বে।
জানা যায়, ২০১১ সালে জসিম খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের অধীনে নৈশ প্রহরী পদে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর থেকে বেপরোয়া গতিতে অবৈধ কার্যকলাপ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে কোণঠাসা করে রেখেছেন। অনেকেই তার এই সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে হেনস্থা শিকার হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অফিসের স্টাফ বলেন, জসিমের কথা মতো না চললে নানামুখী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হেনস্ত হতে হয়। নিজে নিরাপত্তা প্রহরী হলেও তার পিতা এ হাসপাতালের বাবুর্চির কাজ করেন। মাদকাসক্ত পিতাকে বাড়িতে রেখে জসিম নিজেই রান্নার কাজ করে থাকেন। ইয়াসিন নামে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ভাড়াটিয়া দিয়ে রোগিদের খাবার বিতরন ও নাইটগার্ডের রুমে থেকে গেইট খোলা বন্ধের কাজ করান। এ কাজের জন্য পিতা পুত্রকে দাপ্তরিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে কয়েকবার।
জসীম দীর্ঘদিন এই হাসপাতালে থাকার কারণে সবার পরিচিত মুখ হওয়ায় নতুন আগন্তুক ডাক্তার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা খাওয়া-দাওয়া তার উপর নিভর্রশীল হন বলে স্বীকার করেন জসীম।এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সে নানামুখী অপকর্ম নির্ভয়ে করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলোতে তার থাকার সুযোগ থাকলেও সেখানে না থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসের জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ললিতা কনস্ট্রাকশন এর জানান, টেন্ডারের মাধ্যমে হাসপাতালের খাদ্য সরবরহের কাজটি পেয়েও তা করতে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। গত ২০/২১ অর্থ বছরে আমাদের লোকজন কাজ করতে আসলে তাদের কাজ ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। জসিমের বাড়িতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও বকেয়া বিল থাকায় তা বিচ্ছিন্ন করতে গেলে তৎকালীন রামগড় বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৗশলী আহসান উল্লাহকে সরকারি কাজে বাধা এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি লিখিত অভিযোগও দেন।
আহসান উল্লাহ বলেন ১৫ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য গেলে জসিম আমার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ফল ফলাদি কাউকে না দিয়ে সে নিজেই ভোগ করে আসছে। জসিমের পৈত্রিক বাড়ি ফেনীতে রাতের আঁধারে হাসপাতালে মূল্যবান জিনিসপত্র ও ঔষধ পাচারের অভিযোগ করেন হাসপাতালের একটি সূত্র।
২০১৯-২০ সালে বহিরাগত লোকজন দিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে বেনামি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, ক্যাম্পাস এর গাছ চুরি করে সে বিক্রি করে দেয়। হাসপাতালে সংস্কার করার পর পুনঃ ব্যবহারযোগ্য দরজাসমূহ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। গত বছরে বিষপানে রোগির মৃত্যু হলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোগির স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় হস্তান্তর করার গুরুত্বের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, নাইটগার্ড জসিমের এমন বেপরোয়া কর্মকান্ডে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন হাসপাতালের ডাঃ নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারী। সরকারি হাসপাতালকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
এবিষয়ে জসিম বলেন আমার বিরুদ্ধে আনিতো অভিযোগ মিথ্যা। এই বিষয় আমি জড়িত নই।
এবিষয়ে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোজাম্মেল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মেদ ছাবের বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply