রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ জাকির লস্কর মুন্সীগঞ্জ:
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার এসআই (দারোগা) যোবায়ের আহম্মেদ মারামারি জনিত এক অভিযোগের আসামী পক্ষকে নির্দেশনা দিয়ে বাদীপক্ষের নামে উল্টো মামলা করিয়ে গভীর রাতে গুরুত্বর আহত দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করলে তাদেরকে আদালতে প্রেরন করেন ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর। তবে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহন করে ওসি ও এসআই আসামীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন বলে ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে। কারন দারোগা যোবায়ের সকাল বেলা বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন না করে উল্টো আসামীদের সাথে তলে তলে অর্থনৈতিক লিয়াজো করে নাটকীয় মামলা করার পরামর্শ দিয়ে ঐদিনই রাতের বেলা অভিযোগের বাদী গুরুত্বর আহত দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা জানতে চাইলে দারোগা যোবায়ের তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন এবং অভিযোগের বাদী রাজা মিয়ার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতিমুলক হুমকি ধামকি প্রদান করেন।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে দারোগা যোবায়ের বলেন, মাথা ফাটালেই কি মামলা নিতে হবে নাকি। আপনি এসপির কাছে আমার নামে অভিযোগ দেন। তবে দিনের বেলা বাদীর পক্ষে, রাতের বেলা আসামীর পক্ষে একই দারোগা যোবায়ের কিভাবে তদন্তের দায়িত্ব পেলেন, আসামীরা মামলা করার সুবর্ন্য সুযোগ পেলো এবং বাদীর অভিযোগ কেন ডাষ্টবিনে চলে গেলো, এমন সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেও ওসির সাক্ষাৎকার মিলেনি।
দারোগা যোবায়েরের নির্যাতন ও হত্যা মামলার প্রধান আসামী বারেকের হামলার শিকার গুরুত্বর আহত রাজা মিয়ার অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, শ্রীনগর থানাধীন দক্ষিণ মান্দ্রা গ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী বারেক চোকদার তার সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে ২০১৩ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে তারই স্ত্রীর বড়ভাই আব্দুল হক শিকদারকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় আব্দুল হকের বড়ছেলে আলী হোসেন বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।মামলা নং-২৫/১০৮।
বিজ্ঞ আদালেতে উক্ত মামলার বিচারকার্য শেষ পর্যায়ে। যেকোন সময়ে রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে প্রধান আসামী বারেক সহ অপর আসামীরা সুনিশ্চিত শাস্তি ভোগ করার আশংকায় মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদী আলী হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অন্তত ৭টি মিথ্যা/গায়েবী মামলা দেয়া সহ অসৎ পুলিশের সহযোগিতার দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ নভেম্বর-২০২৩ তারিখ বেলা সাড়ে ১১ টায় আলী হোসেনের ছোটভাই শাকিল বাড়ী থেকে পার্শ্ববতী বাজারে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী রাবেক দলবল নিয়ে তার গতিরোধ করে মামলা তুলে নেয়ার চাপ প্রয়োগ করে। শাকিল উক্ত মামলা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করলে বারেক ও তার দলবল অতর্কিত ভাবে হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করতে থাকে।
হামলার শিকার শাকিলের ডাক-চিৎকারে বড়ভাই রাজা মিয়া ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এসময় সন্ত্রাসী বারেকের নির্দেশে তার ক্যাডার ফাহাদ হত্যার উদ্দেশ্যে বাঁশের লাঠি দিয়ে রাজা মিয়ার মাথায় আঘাত করলে সে গুরুতর জখম হয়। এভাবেই আসামীরা সাকিল ও রাজা মিয়াকে লোহার রড, কাঁঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠি দ্বারা এলোপাথারী পিটাতে থাকে। দুইভাইয়ের ডাকচিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসী বারেক তাদেরকে পরবর্তীতে খুন জখমের হুমকি প্রদান করে দলবল নিয়ে চলে যায়।
পরে স্থানীয় এলাবাসীর সহযোগিতার গুরুত্বর আহত দুইভাই শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়। আহত রাজা মিয়া বাদী হয়ে ঐদিনই সন্ধায় সন্ত্রাসী বারেক ও তার দলবলের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি হাতে নিয়ে ২৫নভেম্বর সকালে বাদী রাজা মিয়ার বাড়ীতে পরিদর্শনে আসেন দারোগা যোবায়ের। এসময় তিনি রাজা মিয়া ও তার পরিবারে লোকজনের সাথে কথাবার্তা শেষে আসামী বারেকের সাথে দেখা করে থানায় ফিরে যান। দিনে শেষে সাড়ে রাত ১১ টার দিকে চুপিসারে বাড়ীতে প্রবেশ করে রাজা মিয়া ও শাকিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রেপ্তার করেন দারোগা যোবায়ের।
জানানো হয় বারেকের মেয়ে সেতু বেগম তাদের নামে মামলা করেছে এবং বারেক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তবে স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বারেক সুস্থ্যভাবেই বাড়ীতে আছে, এটি পুলিশের সাজানো নাটক।
এদিকে বারেকের মেয়ে সেতু বেগম যদি মামলা করেই থাকে তাহলে দারোগা যোবায়ের সকাল বেলা কেন শাকিল ও রাজা মিয়াকে হাতের মুঠোয় পেয়ে গ্রেপ্তার করেন নাই বা মামলার কথা প্রকাশ করলেন না এমন প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারে নাই। তবে দারোগা যোবায়ের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আসামী বারেককে নির্দেশনা দিয়ে উল্টো বাদী রাজা মিয়াদের নামে মামলা করিয়েছে এটা অনেকটাই নিশ্চিত করেছে ভুক্তভোগি পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী। কারন অসচ্ছল রাজা মিয়া দারোগা যোবায়ের চাহিদা মতো টাকা-পয়সা দিতে পারেনি বলেই তিনি আসামী বারেকের পক্ষাবলম্ভন করেছে।
এ ব্যাপারে দারোগা যোবায়ের বলেন, মাথা ফাঁটলেই কি মামলা নিতে হবে নাকি। এটা তাদের নাটক। আসামী পক্ষের লোকজন ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যু শর্য্যায় আছে। তাই তাদের মামলা নিয়েছি। আর কিছু বলার থাকলে এসপির কাছে আমার নামে অভিযোগ দেন। যা কিছু হয়েছে ওসি স্যারে নির্দেশে হয়েছে। আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।
Leave a Reply